কানাডার হ্যালিফ্যাক্সে ব্যতিক্রমী ঈদ উদযাপন
ফারজানা নাজ শম্পা
।। হ্যালিফ্যাক্স, কানাডার থেকে ।।
একমাস সিয়াম সাধনার বা পবিত্র রমজানের পর বছর ঘুরে আবার এসেছে খুশির ঈদ। পবিত্র ঈদুল ফিতর। সমগ্র মুসলিম বিশ্বের সবচাইতে বৃহত্তম দুটি ধর্মীয় উৎসব হলো ঈদুল ফিতর ও ঈদুল আজহা।
মহান আল্লাহতালার বিধান অনুসারে সূর্যোদয় থেকে সূর্যাস্ত পর্যন্ত মাসব্যাপী রোজা পালনের মাধ্যমে মানুষের চিত্তকে সংযমী করার ও ‘নফস’ বা ষড়রিপুকে (ক্রোধ, মাৎসর্য, লোভ, হিংসা ইত্যাদি) দমন বা নিয়ন্ত্রণ করার শিক্ষা অৰ্জন করেন। মানবতার, আত্মসংযম ও আত্মনিয়ন্ত্রণের এই অনন্য গুণাবলী শিক্ষা অর্জনের লক্ষ্যে সিয়াম বা রমজানের গুরুত্ব অপরিসীম। আর রমজানের শেষে আসে ঈদুল ফিতর। তাই সেটা হলো মানবতার ও ঐক্যের এক অনন্য মহোৎসবের প্রতীক স্বরূপ।
বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো কানাডার পূর্ব প্রান্তে আটলান্টিকে প্রদেশের রাজধানী হ্যালিফ্যাক্সে যথারীতি ভাবগাম্ভীর্য ও উৎসবের আমেজে গত ২৫ জুন ২০১৭ ইং রবিবার পালিত হয়েছে পবিত্র ঈদের উৎসব। ঈদ মানে এক মহা সম্মিলন, ঈদুল-ফিতর মানে সকলের প্রতি বিশেষ দানের, গরিব-দুঃখী সকলের মধ্যে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দেয়া ও সকলের সাথে খুশির বার্তা ভাগ করে নেয়া। ঈদের আনন্দ পূর্ণতা পায় বিভিন্ন উৎসব আয়োজনের মাধ্যমে।
এই দিনে সমাজের সব শ্রেণী পেশার মানুষেরই প্রচেষ্টা থাকে এই বিশেষ দিনটিতে জীবনের সকল কাঠিন্য থেকে একটু দূরে থেকে একটি চমৎকার মুহূর্ত কাটানোর। হ্যালিফ্যাক্সে বাংলাদেশ কমিউনিটি অফ নোভা স্কোটিয়ার (Bangladesh Community Association of Nova Scotia) সকল সম্মানিত সদস্যদের ও স্বেচ্ছাসেবকদের যৌথ ও আন্তরিক উদ্যোগে গত ২৫ জুন রোববার সবুজ প্রকৃতির মাঝে এক ব্যতিক্রমধর্মী ঈদের ভিন্নধর্মী ঈদুল ফিতর এর উৎসবের আয়োজন করা হয়।
চার দেয়ালের মধ্যে নয় এইবার তাঁদের ঈদ উৎসব এর প্রকাশে ছিলো এক ভিন্নমাত্রিকতা। ঈদুল ফিতর এর এই উৎসব অনুষ্ঠান আয়োজিত হয় প্রকৃতির উন্মুক্ত নির্মল প্রান্তর ঐতিহাসিক ডি উল্ফ পার্কে। হ্যালিফ্যাক্স ও বেডফোর্ড অঞ্চলের আটলান্টিকের তীরবর্তী ডি উল্ফ পার্ক ঐতিহাসিকভাবে জনপ্রিয় একটি পার্ক। বেডফোর্ড অঞ্চলের অধিবাসীদের একান্ত ইচ্ছা অনুসারে কানাডীয় নৌবাহিনীর উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা হেনরি জর্জ (হ্যারি) ডি উল্ফ এর নামানুসারে এই পার্কটির নামক করেন করা হয় ডি উল্ফ পার্ক। এক্ষেত্রে উল্লেখ্য যে মিস্টার ডি উল্ফ ১৯০৩ সালে বেডফোর্ড অঞ্চলের জন্মগ্রহণ করেন এবং দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে কানাডার নৌবাহিনীর একজন নির্ভীক সদস্য ও সৈনিক হিসেবে অত্যন্ত প্রশংসনীয়, অনবদ্য সাহসিক ভূমিকা রাখেন।
প্রকৃতির সজীব সবুজ শ্যামলিমার কোলঘেঁষে আটলান্টিক সাগরের এক পাড়ে গড়ে উঠা এই পার্কটির নৈসর্গিক সৌন্দর্য্য ছিলো বড় মনোরম। একপাশে বয়ে চলা সুনীল আটলান্টিক আর অপর পাশে পাখির কলকাকলিতে মুখরিত এই সবুজ নৈসর্গ, যেকোন প্রকৃতি প্রেমীর হৃদয়ে দোলা দিয়ে যাবে। বাংলাদেশ কমিউনিটি এসোসিয়েশন অব নোভা স্কটিয়ার সম্মানিত সকল সদস্যরা ও তাদের সহধর্মীনিদের যৌথ উদ্যোগে উন্মুক্ত আলোকিত এই সবুজ প্রান্তরে ঈদের নামাজ শেষে দেশীয় স্বাদে হাতে তৈরী নানারকম মুখরোচক দেশীয় খাবার নিয়ে একটি ভিন্ন মাত্রার দিনব্যাপী এর ঈদ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছিলেন।
শুধুমাত্র খাদ্যগ্রহণ ও রসনার তৃপ্তির মাধ্যমে বাংলাদেশ কমিউনিটি এসোসিয়েশন এর সদস্যরা তাদের এই উদ্যোগকে সীমাবদ্ধ রাখেননি। এই অনুষ্ঠানে তারা আরো অন্তর্গত করেছিলেন বিভিন্ন ধরণের মজাদার শিশুতোষ খেলা, আনন্দ উদযাপন খেলা, রশি দিয়ে ট্যাগ অফ ওয়ার খেলা ইত্যাদি।মহান আল্লাহতালার কৃপায় সেদিন সে আলোকিত রোববার সকালে আবহাওয়াও ছিল সকলের অনুকূলে। প্রকৃতির এই নির্মল পরিবেশে রৌদ্রোজ্জ্বল সেই দিন আর পার্কে এসোসিয়েশনের সদস্যদের, আমন্ত্রিত অতিথিদের ও তাঁদের শিশুদের হাসি আনন্দে মুখরিত ছিল ঈদের সারাটা দিন। সদস্য ও আমন্ত্রিত অতিথিদের সমন্বয়ে প্রায় একশো জন মানুষের উপস্থিতি ছিল এই আয়োজনে।
দিনশেষে সকলেই ঘরে ফিরেছেন এক পূর্ণতার আনন্দ নিয়ে যা তাঁদের অনেকেই মনে করিয়ে দেয় দূরে বহুদূরে ফেলে আশা বাংলাদেশের প্রিয় মুখগুলোকে নিয়ে কাটানো ঈদের অনেক সোনালী রুপালি স্মৃতির দিনগুলোতে। উৎসবের আয়োজনে গতানুগতিকতাকে পিছনে ফেলে বাংলাদেশ এসোসিয়েশনে অব নোভা স্কটিয়ার সকলে সদস্যদের প্রবাসের জীবনে এই শ্যামল প্রকৃতির মাঝে চমৎকার আঙ্গিকে ঈদ উদযাপন এর আয়োজন সত্যিই প্রশংসার দাবিদার। ঈদের অনাবিল আনন্দ রেশ ছড়িয়ে পড়ুক সবার জীবনে, আমরা যেন সকল হিংসা, ব্যক্তিগত হীন স্বার্থ, দ্বেষ, মলিনতাকে পিছনে ঠেলে ঈদের ভ্রাতৃত্ব, সম্প্রীতি ও ঐক্যের আদর্শে একযোগে কাজ করতে পারি সেই প্রত্যাশায় সবাইকে জানাচ্ছি ঈদ মোবারক।
ফারজানা নাজ শম্পা ফ্রিল্যান্স লেখক হ্যালিফ্যাক্স, কানাডা
লেখকের ইমেইল: abararaafi@yahoo.ca
Source : CBN24.ca
Recent Comments