কানাডার হালিফাক্স এ বাংলাদেশের হাই কমিশন এর এক দিনের সেবা কার্যক্রম পরিচালিত
বর্ণিল আয়োজনে ও বিপুল উৎসাহ-উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে গত ৩০ জানুয়ারি ২০১৮ তে কানাডার নোভা স্কোশিয়া প্রদেশের রাজধানী শহর হালিফাক্স এ বসবাসরত বাংলাদেশীদেরকে বিভিন্ন সেবা যেমন মেশিন রিডেবল পাসপোর্ট এমআরপি প্রদান, জন্ম নিবন্ধন সনদ, পাসপোর্ট নবায়ন ইত্যাদি কার্যক্রম পরিচালিত হলো বাংলাদেশের হাই কমিশন এর উদ্যোগে। বরফস্নাত দিনে বৈরী আবহাওয়া তেও উল্লেখযোগ্য সংখ্যক বাংলাদেশী সেবা গ্রহন করেন। আগত প্রবাসী বাংলাদেশীরা এই ধরনের একটা কার্যক্রম পরিচালোনার জন্য সুদূর অটোয়া থেকে আসা কানাডায় নিযুক্ত বাংলাদেশের মান্যবর হাই কমিশনার মিজানুর রহমান, কাউন্সিলর শাখাওয়াত হোসাইন, কন্সুলার অ্যাসিস্ট্যান্ট কামাল হোসাইন এবং যাকির হোসাইন কে আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানান। সার্বিক সহযোগিতায় ছিল হালিফাক্স এর ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি এসোসিয়েশান অফ নোভা স্কোশিয়া (BDCANS)। কার্যক্রম পরিচালিত হয় সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত হোটেল ডেল্টা বারিংটন এ।
সন্ধায় বাংলাদেশ কমিউনিটি এসোসিয়েশান অফ নোভা স্কোশিয়া (BDCANS) এর উদ্যোগে অনুষ্ঠিত হয় পরিচিতি ও মতবিনিময় সভা। উক্ত সভায় হালিফাক্স এ বসবাসরত বাংলাদেশীদের বিভিন্ন সংস্কৃতিক কর্মকাণ্ড, ছোটদের স্কুল ইত্যাদি বিষয়ের এর উপর অডিও-ভিডিও প্রেজেন্টেশান তথা ভিডিও ডকুমেন্টারী এবং হালিফাক্স এর স্টুডেন্ট দের নিয়ে প্রবাস জীবনের উপর একটা ছোট্ট নাটিকা দেখান হয় BDCANS এর পক্ষ থেকে। এছাড়াও ছিল মুক্তিযুদ্ধের উপর প্রদর্শনী। অনুষ্ঠানটি উপস্থিত সকলকে বিমুগ্ধ করে।
অনুষ্ঠানের মঞ্চে এসে হাই কমিশনার মিজানুর রহমান সফল এ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান আয়োজনের জন্য সকল শিল্পী, কলা-কূশলী এবং হাই-কমিশনের সহকর্মীগণকে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করেন। শুরুতেই ১৯৫২’র ভাষা আন্দোলন, ‘৭১এর মহান মুক্তযুদ্ধ ও ‘৭৫-এর কালরাতে শাহাদাৎ বরণকারী জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান ও তাঁর পরিবারের সদস্যগণ সহ সকল শহীদের স্মৃতির প্রতি সম্মান জানিয়ে মান্যবর হাই কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, এটি আনন্দের বিষয় যে আজ কানাডায় উচ্চ-মাধ্যমিক পর্যায়ে আন্তর্জাতিক ভাষাগুলোর মধ্যে বাংলা ভাষাও অন্তর্ভৃক্ত হয়েছে। এই কানাডারই হালিফাক্স এ BDCANS -এর অধীনে পরিচালিত স্কুল এ বাংলা ভাষা শিক্ষা কার্যক্রম এবং বাঙালী সংস্কৃতির বিকাশে কাজ করে যাবার জন্য বাংলা ভাষার শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, অভিভাবকসহ বাঙালী কমিউনিটিকে তিনি বাংলাদেশের হাই কমিশনার হিসেবে ধন্যবাদ জানান। তিনি বলেন, বাংলাদেশ হাই কমিশনের উদ্যোগে প্রতি বছর ২১শে ফেব্রুয়ারী মহান শহীদ দিবস, ১৭ই মার্চ জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিবস ও জাতীয় শিশু দিবস, পহেলা বৈশাখ বাংলা নববর্ষ এবং ১৬ই ডিসেম্বর মহান বিজয় দিবসের বিশেষ দিনগুলোতে সাংস্কৃতিক ও নানামুখী অনুষ্ঠান আয়োজনের মাধ্যমে বাঙালী সংস্কৃতিকে উৎসাহ প্রদান এবং এর প্রসার চলমান রয়েছে, যার অন্যতম অংশীদার কানাডা প্রবাসী বাংলাদেশীগণ। প্রবাসে শিশুদের বাংলা ভাষা চর্চায় অধিকতর উৎসাহ প্রদান এবং বাংলা ভাষা শিক্ষা ও সংস্কৃতির প্রতি অনুরক্ত হতে উদ্বুদ্ধ করার জন্য তিনি অভিভাবকদের বিশেষ অনুরোধ জানান।
বাংলাদেশের হাই-কমিশনার বর্তমান বাংলাদেশের সকল উন্নয়নমূলক কর্মকান্ডকে বহির্বিশ্বে তুলে ধরতে নিষ্ঠার সাথে কাজ চালিয়ে যাওয়ার দৃঢ় সংকল্প ব্যক্ত করেন।
তিনি ঘাতক নূর চৌধুরীকে কানাডা থেকে দেশে ফেরত পাঠিয়ে বিচারের মুখোমুখি করতে সরকারের সংকল্পের আলোকে মিশনের দৃঢ় অবস্থান ব্যাক্ত করেন এবং বলেন, এই ভয়াবহ খুনীকে দেশে ফেরত পাঠাতে বাংলাদেশ হাই কমিশন দৃঢ় প্রতিজ্ঞ। এ লক্ষ্যে তিনি সরকারী উদ্যোগের পাশাপাশি কানাডার জনপ্রতিনিধিদের উপর চাপ অব্যাহত রাখার লক্ষ্যে প্রবাসী বাংলাদেশীদের প্রতি আহ্ববান জানান। তিনি বলেন, আপনারা অটোয়াসহ সমগ্র কানাডা প্রবাসী হাজার হাজার বাংলাদেশীরা ফাঁসির দন্ডপ্রাপ্ত এ খুনীর বিরূদ্ধে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করুন এবং তাকে কানাডা থেকে বহিস্কার করে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে আইনী সংশোঘনের জন্য আপনাদের এমপিদের সমর্থন আদায়ের পদক্ষেপ অব্যাহত রাখুন।
তিনি উল্লেখ করেন, বন্ধুপ্রতীম দুই রাষ্ট্র বাংলাদেশ-কানাডার মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য বর্তমানে ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে উন্নীত হয়েছে, যা ভবিষ্যতে আরো বৃদ্ধি পাবে। সম্প্রতি টরন্টো, ক্যালগেরী, এডমন্টন ও সাস্কাটুনে, নিউ ব্রান্সওয়িক সফরে বিপুল সংখ্যক বাংলাদেশীকে কনস্যুলার সেবা দেবার কথা উল্লেখ করে পর্যায়ক্রমে সবগুলো প্রদেশে এবং সবক’টি বড় শহরেই কনসুলার সেবা সম্প্রসারিত করার আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
বাণিজ্য সম্প্রসারণের ক্ষেত্রে তিনি প্রবাসীদের কাছে অনুরধ করেন যেন কানাডিয়ান আই টি কোম্পানি গুলু বাংলাদেশের বিভিন্ন সফট ওয়ার মেলা তে আংশগ্রহন করেন সেই ব্যপারে উদ্যোগ নিতে। পাশা পাশি গার্মেন্টস, ঔষধ, চামড়া, হিমায়িত দ্রব্য গুলুর চাহিদার কথা উল্লেখ করেন। প্রবাসীদের কল্যাণার্থে দূতাবাসের আন্তরিক প্রচেষ্টায় কানাডার সবচেয়ে বাংলাদেশী অধ্যূষিত শহর টরন্টোতে একটি কনসুলেট খোলার বিষয়ে সরকারের সিদ্ধান্তের কথা উপস্থিত সকলকে অবহিত করেন বাংলাদেশের হাই কমিশনার।
দু’দেশের মধ্যে বিমমান চলাচল চুক্তি এবং বৈদেশিক বিনিয়োগ সুরক্ষা চুক্তি স্বাক্ষরের বিষয়গুলো প্রক্রিয়াধীন রয়েছে। তিনি কানাডাপ্রবাসী বাংলাদেশীদের সেবার প্রতি সর্বোচ্চ গুরুত্বারোপ করে বলেন, তাঁদের কল্যাণে বাংলাদেশ দূতাবাস দৃঢ়ভাবে অঙ্গীকারাবদ্ধ।
কাউন্সিলর শাখাওয়াত হোসাইন বলেন, আজ বাংলাদেশ বিশ্বের বুকে মাথা উচু করে পরিচয় দেবার মতো একটি দেশ। আমরা গর্বিত যে আমরা বাঙলী। বাংলাদেশ আজ ব্যাপক অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি নিয়ে সোনালী ভবিষ্যতের পানে এগিয়ে চলেছে।
তিনি উপস্থিত সকল কে বাংলাদেশ এর উজ্জ্বল ভাবমূর্তি তুলে ধরতে অনুরধ করে কানাডার রাজধানী অটোয়াতে বাংলাদেশের হাই কমিশন থেকে সীমিত লোকবল নিয়ে লক্ষাধিক প্রবাসী বাংলাদেশী কে আপ্রাণ সেবা দেবার কথা তুলে ধরেন।
অনুষ্ঠানের শেষে সুস্বাদু খাবার দিয়ে আগত অতিথিদের আপ্যায়নের মধ্য দিয়ে সমাপ্ত হয় বাংলাদেশ হাই কমিশনের উদ্যোগে সেবা কার্যক্রম।
এই ধরনের একটি সেবা মূলক কাজের জন্য বাংলাদেশ হাই কমিশনের পাশে থেকে সার্বিক সহযোগিতার জন্য হালিফাক্স এর ‘বাংলাদেশ কমিউনিটি এসোসিয়েশান অফ নোভা স্কোশিয়া (BDCANS) কে আন্তরিক অভিনন্দন জানিয়ে বাংলাদেশ হাই কমিশনের পক্ষ থেকে পুরষ্কার দিয়ে উৎসাহ প্রদান করা হয়।
Recent Comments