গত ২২শে ফেব্রুয়ারি, ২০২০ কানাডার নোভা স্কসিয়ায় বাংলাদেশ কমিউনিটি অ্যাসোসিয়েশান অফ নোভা স্কসিয়া (বিডিক্যান্স)-এর উদ্যোগে পালিত হল “আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস”। প্রবাসী বাংলাদেশীদের সাপ্তাহিক ছুটি বিবেচনায় উক্ত অনুষ্ঠানটি ২১ শে ফেব্রুয়ারীর পরিবর্তে ২২শে ফেব্রুয়ারী রোজ শনিবার হ্যালিফ্যাক্স কেন্দ্রীয় লাইব্রেরী মিলনায়তনে উদযাপিত হয়।
উক্ত অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলা একাডেমী পুরস্কারপ্রাপ্ত বাংলাদেশের প্রখ্যাত কবি ও সাহিত্যিক, মনোগ্রাহী টেলিভিশন উপস্থাপক ও অনুবাদক আসাদ চৌধুরী, বিশিষ্ট চলচ্চিত্র নির্মাতা নাদিম ইকবাল, জনাব এ্যন্ডি ফিল ম্যোর (এম,পি হ্যালিফ্যাক্স পার্লামেন্ট), লিও এ, গ্ল্যাভাইন (কমিউনিটি, কালচার ও হ্যেরিটেজ মন্ত্রী), টনি ইন্স (আফ্রিকান নোভাস্কসিয়া কল্যাণ মন্ত্রী), লিসা ব্ল্যাকবার্ণ (ডেপুটি মেয়র, হ্যালিফ্যাক্স রিজিওনাল মিউনিসিপালিটি), হ্যালিফ্যাক্স ও নোভা স্কসিয়ার প্রবাসী বাংলাদেশীগণ এবং অন্যান্য কানাডিয়ান গণ্যমান্যব্যক্তিবর্গ ।
অনুষ্ঠানের সূচনা হয় অতিথিবরণ এবং ভাষা মেলা উদযাপনের মাধ্যমে। হ্যালিফ্যাক্সের বিভিন্ন ভাষাভাষী মানুষজনের অনেকগুলো সংগঠনের উপস্থিতে ভাষামেলায় ১০টির বেশি স্টলে সাংস্কৃতিক বিনিময় ও প্রদর্শনী চলে। মি’কমা সংস্কৃতির সূচনা কৃত্যের মাধ্যমে মূল অনুষ্ঠানের সূচনা হয়। তারপর বিডিক্যান্সের আজহারুল হক ভাষা আন্দোলনের ইতিহাস এবং বিডিক্যান্সের অগ্রযাত্রা বিষয়ক বক্তব্য রাখেন। কমিউনিটি, কালচার ও হ্যেরিটেজ মন্ত্রী লিও এ, গ্ল্যাভাইন নোভা স্কসিয়া সরকারের পক্ষ হতে বিশেষ বক্তব্য উপস্থাপন করেন। হ্যালিফ্যাক্স রিজিওনাল মিউনিসিপালিটির পক্ষ থেকে মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন লিসা ব্ল্যাকবার্ণ (ডেপুটি মেয়র, হ্যালিফ্যাক্স রিজিওনাল মিউনিসিপালিটি)।
উক্ত অনুষ্ঠানের মঞ্চে শহীদ মিনারের আবয়ব নির্মিত হয়েছিল। সকলে মিলে “আমার ভাইয়ের রক্তে রাঙ্গানো একুশে ফেব্রুয়ারী” গান গাইতে গাইতে শহীদ মিনারে পুষ্পতাবক অর্পণ করে। উপস্থিত কানাডিয়ানরাও সকলের সাথে একাত্মতা ঘোষনা করেন এবং শহীদ বেদীতে পুষ্পস্তাবক অর্পণ করেন। এরূপ শ্রদ্ধাপ্রকাশে কানাডিয়ানরাও উপস্থিত বাংলাদেশীদের সাথে আবেগে আপ্লূত হয়ে পড়েন। তারপর উপস্থিত বিশেষ বক্তাগণ মাতৃভাষার গুরুত্ব সম্পর্কে বক্তব্য রাখেন। সকল বক্তাগণ তাদের বক্তব্যে বাংলাভাষা এবং ভাষা শহীদদের স্মরণ করেন।
তারপর বিডিক্যান্সের ফারহানা ফেরদৌসের দিকনির্দেশনায় পরিবেশিত হয় বিডিক্যান্স সাস্কৃতিক সন্ধ্যা। উক্ত সাস্কৃতিক অনুষ্ঠানে শিশুদের উল্লেখযোগ্য অংশগ্রহণ আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়- বাংলাদেশীরা পৃথিবীর যেখানেই থাকুকনা কেন, বাঙ্গালীর হৃদয় সদা লালণ করে বাংলার সংস্কৃতি। অনুষ্ঠানে পরিবেশিত রবীন্দ্রসংগীত “ও আমার দেশের মাটি” সবাইকে মন্ত্রমুগ্ধ করে দেয়। তারপর একটি ইরানী সাংস্কৃতিক সংঘের উদ্যোগে ফারসি ভাষায় সঙ্গীত পরিবেশিত হয়। বাংলার জনপ্রিয় কবি আসাদ চৌধুরীর অসাধারণ আবৃত্তি সকলকে বিমোহিত করে। অনুষ্ঠানের শেষ পর্যায়ে বাংলাদেশের ডকুমেন্টারী চলচ্চিত্র বিদ্যাভুবন প্রদর্শিত হয়।
এভাবেই বিডিক্যান্স সংশ্লিষ্ট সকলের আক্লান্ত পরিশ্রম ও উদ্যোগে কানাডার নোভা স্কসিয়ায় বাংলাদেশ ও কানাডার এরকম সাংস্কৃতিক ঐতিহ্য বিনিময়, প্রদর্শন ও লালন সম্ভব হচ্ছে। এতে করে আমাদের সংস্কৃতি বিশ্বের দরবারে সম্মানের সহিত স্থান পাচ্ছে এবং আমরাও বাংলাদেশী হিসেবে সম্মানের সাথে নিজের দেশকে বিশ্ববাসীর কাছে তুলে ধরতে পারছি।
– মোহাম্মদ আলী খান (অর্ণব)হ্যালিফ্যাক্স, কানাডা
Recent Comments